Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

পশুকে কৃমি মুক্ত রাখার উপায়

 

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গবাদিপশু পালন লাভজনক ও বেকার সমস্যা সমাধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হওয়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু আমাদের খামারিরা গবাদিপশু পালন করতে গিয়ে একটি সমস্যার সম্মুখীন হয়, তা হলো পরজীবী বা কৃমি। কৃমি এক ধরনের পরজীবী যা পশুর ওপর নির্ভর করে জীবন ধারণ করে। তারা পশুর অন্ত্রে, ফুসফুসে, লিভারে, চোখে, চামড়ায় বাস করে ও পশুর হজমকৃত খাবারে ভাগ বসিয়ে পশুর ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। অনেক কৃমি পশুর রক্ত চুষে ও আমিষ খেয়ে পশুকে দুর্বল ও স্বাস্থ্যহীন করে ফেলে।

পরজীবী সাধারণত দুই ধরনের-
১. দেহের ভেতরের পরজীবী
২. দেহের বাইরের পরজীবী।

একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের প্রাণিসম্পদ হাসপাতালগুলোতে গত বছর (২০১০) বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত গবাদিপশুর (গরু, ছাগল, ভেড়া) মধ্যে ৫১.৩৬ ভাগ কৃমি বা পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত। এর মধ্যে আক্রান্ত গরুর মধ্যে ৬৮.৯২ ভাগ, আক্রান্ত গাভীর মধ্যে ৪৫.১৬ ভাগ, বাছুরের মধ্যে ৫০.০৭ ভাগ, ভেড়ার মধ্যে ৬১.৬৬ ভাগ এবং আক্রান্ত ছাগলের মধ্যে ৩৪.৭৯ ভাগ বিভিন্ন কৃমি বা পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত হয়। সুতরাং কৃমি বা পরজীবী আমাদের গবাদিপশু পালনের প্রধান শত্রু। কৃমি বা পরজীবীগুলো হচ্ছে কলিজাকৃমি, পাতাকৃমি, গোলকৃমি, রক্তকৃমি, ফিতাকৃমি, প্রটোজয়া ও বিভিন্ন ধরনের বহিঃপরজীবী উকুন, আঠালী, মাইট ইত্যাদি গবাদিপশুকে আক্রান্ত করে। কৃমির কারণে গাভীর দুগ্ধ উত্পাদন ক্ষমতা কমে যায় অস্বাভাবিকভাবে এবং বাছুরগুলো পেট ফুলে গিয়ে স্বাস্থ্যহীন হয়ে পড়ে। ফলে দুগ্ধ ও মাংস উত্পাদন ক্ষমতা মারাক্তকভাবে ব্যাহত হয়। এর কারণে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস গবাদিপশুকে আক্রান্ত করার পরিবেশ তৈরি করে।

গবাদিপশুকে কৃমি বা পরজীবী থেকে মুক্ত রাখার উপায়গুলো হচ্ছে-
১) গবাদিপশুর বাসস্থানের জন্য নির্ধারিত স্থানের মাটি শুষ্ক ও আশপাশের জমি থেকে উঁচু হওয়া প্রয়োজন। সম্ভব হলে নদীনালা, খালবিল, হাওর-বাঁওড় থেকে দূরে করতে হবে।
২) গবাদিপশুর খামারের আশপাশে যেন বৃষ্টির পানি এবং অন্যান্য বর্জ্য জমে না থাকে ।
৩) খামারের জন্য নির্ধারিত স্থানের মাটিতে বালির ভাগ বেশি হওয়া প্রয়োজন যেন বর্ষাকালে খামারের মেঝে কর্দমাক্ত না হয় ।
৪) পশুর মলমূত্র ও আবর্জনা অল্প সময় পরপর পরিষ্কার করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ঘরে মলমূত্র ও আবর্জনা জমা না থাকে।
৫) খামারের অনেক দূরে পশুর মলমূত্র ও আবর্জনা পুঁতে রাখতে হবে।
৬) গবাদিপশুর বাসস্থান প্রতিদিন আদর্শ ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে এবং জীবাণুনাশক মেশানো পানি দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
৭) তিন মাস অন্তর গবাদিপশুকে কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে।

কলিজাকৃমি, পাতাকৃমি, গোলকৃমি, রক্তকৃমি, ফিতাকৃমি দ্বারা আক্রান্ত পশুকে অ্যালবেনডাজল ইউএসপি ৬০০ মি.গ্রা., হেক্সাক্লোরোফেন ইউএসপি ১ গ্রাম, লিভামিসোল হাইড্রোক্লোরাইড বিপি ৬০০ মি.গ্রা. এবং ট্রাইক্লাবেন্ডাজল আইএনএস ৯০০ মি.গ্রা. জাতীয় ওষুধ ভালো কাজ করে। কর্কসিডিয়াতে সালফোনামাইডস, স্ট্রেপটোমাইসিন ও মেট্রোনিডাজল ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ট্রিপানোসোমা ও ব্যাবেসিওসিস তে ব্যাবকপ খাওয়ালে রোগ ভালো হয়। উঁকুন, আঠালী ও মাইটে আক্রান্ত গবাদিপশুর শরীরে আইভারমেকটিন, সেভিন, নেগুভান ইত্যাদি ওষুধ ব্যবহার করলে ওইসব পরজীবী থেকে গবাদিপশুকে রক্ষা করা যায়। পরিশেষে আমাদের গবাদিপশুকে কৃমি বা পরজীবীমুক্ত রাখতে পারলে আমরা দুগ্ধ ও মাংস উত্পাদনের লক্ষ্যে পৌঁছাব।